সামাজিক সমস্যা
ধর্ষণ আহামরি কিছু না। আমাদের সভ্য জাতির তৈরীকৃত সভ্য নিয়ম থেকেই এর জন্ম। সমাজ গবেষক, ফেসবুক গবেষকগণ কত না কারন বের করে। আমাদের সিনিয়র ভাই, আংকেল, দাদু যাঁরা, তারা কি আমাদের মতো ধর্ষণ শব্দটা এত কম বয়সে শুনেছে?
আমি ৭ম শ্রেনিতে থাকতে প্রথম শুনি। তবে ৮ম শ্রেনিতে এর সংজ্ঞা পাই। কর্তার ইচ্ছায় কর্ত্রীর অনিচ্ছায় জোড়পূর্বক বস্ত্র হরণের মাধ্যমে……… তাহাকে ধর্ষণ বলে। হা হা হা। এটা এখন লজ্জার বিষয় না বলতে। কমবেশি নাবালক থেকে শিশু, সবাই এই শব্দটার সাথে পরিচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিশুরাতো প্রত্যাহিক কাজের মতো ধর্ষণ শব্দটি শ্রবণ করছে। ওষুধের মতো ধর্ষণ শব্দটা আজকাল তেতো লাগে। এদেশে আজ ধর্ষণ ডাল ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হোটেলে ১ প্লেট ভাত খাবেন ডাল দিয়ে। ভাতের দাম নিবে শুধু, ডালের দাম নাই। তেমনে ধর্ষণ ঘটছে, কিন্তু এর বিচার নাই। আমেরিকা ফ্রি সেক্স এর দেশ, বাংলাদেশ ফ্রি ধর্ষন। ধর্ষকদের ধরে কয়েকদিন লোক দেখানো জেলে রাখা হয় এদেশে, তারপর আমৃত্যু জামিন।
ধর্ষণ- কারন
“কারন ছাড়া কার্ম সাধিত হয় না”
ধর্ষণও একপ্রকার কর্ম, তবে এটা কুকর্ম। শত শত কারন থাকে একটা কর্মের পিছনে। কিছু কারন কর্মের জেরেই উঠে আসে। আবার কিছু কারন বহুকালের লুকায়িত অবেগকে ধর্ষনের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত করে।
সমাজে নারী পুরুষের বৈষম্যের শেষ পর্যায় ধর্ষন। এ ধরনের বৈষম্য আমরা সেই ছোটবেলা থেকে দেখছি এবং মেয়েরা যে আমাদের আপন কেহ, তাহা তখন থেকেই ভুলতে শিখেছি।
কয়েক দশক আগেও ছেলে মেয়েরা অবাধ মেলামেশা করত ৷ সেখানে না ঘটতো ধর্ষন না ঘটত শারিরীক সম্পর্ক। সেখানে ঘটত মনের মিলন। যা বন্ধুত্ব, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, আস্থা, শ্রদ্ধাবোধ জন্ম দিত। এহেন সম্পর্ক নারী-পুরুষ, পুরুষ-নারীর মাঝে কোনোরুপ নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনার জন্ম দিতো না।
আমরা যখন প্লে, নার্সারিতে পড়তাম তখন ছেলে-মেয়ে একই সাথে একই বেঞ্চে বসতাম। আমিতো মুক্তা নামের মেয়েটার পাশে বসতে না পারলে ক্লাসই করতাম না। প্রাইমারি শিক্ষাজিবনে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা তাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধবোধ ও বন্ধুত্বকে দৃঢ় করে।
হাইস্কুল লাইফে এসে পৃথক হওয়া শুরু। বয়েজ-গার্লস নামে দুটি প্রতিষ্ঠান পৃথক হয়ে যায়, সেই সাথে পৃথক হয় বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ। বহু সময়ের ব্যবধানে ও প্রযুক্তির কল্যানেই এই সময়ে ছেলেমেয়েদের মাঝে এক ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। তবে এই পরিবর্তনের সূচনা পরিবার থেকেই শুরু হয়।
এসময় একজন ছেলে ও একজন মেয়ে পরস্পরকে ভিন্ন ও আলাদা সত্তা ভাবতে শুরু করে। এখানেই কিশোর মনে একধরনের ক্ষোপের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোপকে কেউ পাত্তা দেয় না, আবার কেউ এই ক্ষোপকে নিয়ে গবেষনা শুরু করে। সেই গবেষনার ফসল ইভটিজিং বা ধর্ষনের মতো ভয়াবহ পরিনতি।
শুধু যে হাইস্কুল লাইফ তা নয়, কলেজ, ইউনিভার্সিটি এমনকি কর্মক্ষেত্রে ব্যবধান পরস্পরকে ভিন্নতা দান করে। ফলে এরুপ ঘটনা অহরহ ঘটছে।
.
ধর্ষনের আরেকটি প্রধান কারন হচ্ছে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব।এর সাথে ধর্মচর্চা ও নৈতিকতার চর্চাও জড়িত।
শৈশবে আমরা পরিবার থেকে ধর্মীয় ও নৈতিকতার শিক্ষা পাই। কিন্তু তার চর্চা আমরা পরবর্তী জিবনে সম্পূর্ণভাবে করতে পারি না।শিক্ষা জিবনে প্রবেশের মধ্য দিয়ে ধর্মচর্চা ও নৈতিকতাচর্চা হ্রাস পেতে থাকে। আমরা পাঠ্যবই, পরিক্ষা,প্রাইভেট,কোচিং ইত্যাদির মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেই। যেখানে বিশ্রামের সময় সামান্য, সেখানে ধর্মচর্চা ও নৈতিকতা চর্চা দূভাবনীয়। এর থেকে আমরা ধর্মীয় বিধিবিধান এড়িয়ে চলতে শুরু করি।
ধর্মীয় বিধিবিধান সর্বদা মানুষের মনে শুভ চিন্তায় উদয় ঘটায় এবং পাপ থেকে দূরে রাখে। যখন আমরা ধর্মচর্চা থেকে নিজেকে দূরে রাখি, তখন পাপ চিন্তা আমাদের মনকে গ্রাস করে এবং আমরা পাপের পথে ধাবিত হই। নৈতিকতা একপ্রকার আদর্শিক মূল্যবোধ যা ভালো-মন্দের মাঝে পার্থক্য ও ভালো কাজকে গ্রহনে উদ্ভুদ্ধ করে। ধর্মচর্চার সাথে নৈতিকতার ব্যাপক সম্পর্ক।
পাঠ্যসূচিতে “ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা” বইটি যুক্ত থাকলেও আমরা সেটা বাস্তব প্রয়োগের জন্য পড়ি না, পড়ি ভালো মার্কস পাওয়ার জন্য।বলতে গেলে একপ্রকার অবহেলার সাব্জেক্ট এটা। রসায়ন, পদার্থ, বাংলা, ইংরেজি সাবজেক্টের মতো এই সাবজেক্টে আমরা গুরুত্ত দেই না। ফলাফল, আমাদের মন পাপসংবেদনশীল হয়ে ওঠে।
ধর্মচর্চায় দেশের পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পরিবার থেকেও মাঝে মাঝে বাধা আসে। যেমনঃ পরিবার থেকে অনেক বাচ্চাকে রোজা রাখতে দেয়া হয় না শরীর খারাপ হবে বলে। “শরীর খারাপ হলে পরিক্ষা খারাপ হবে, সামনে পরিক্ষা।পরিক্ষার পর যত খুশি রোজা রাখিস।”
যেখানে ধর্মচর্চার শুরু, সেখান থেকে আসা বাধা প্রবল ভাবে ধর্মবিমুখ করে মানুষকে।
মানুষের মন বড় অদ্ভুৎ।
দূর্বল মনে পাপকাজ ও পাপচিন্তা সহজে জন্মায়। মানুষের নিজস্ববোধ,বিবেকবোধ লোপ পায়।
তাই সহজে দূর্বল মনের মানুষেরা ধর্ষন, ইভটিজিং, সন্ত্রাসবাদের মতো কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না।
ধর্মীয় বিশ্বাস, বিধিবিধান, ধর্মচর্চা, নৈতিকতার চর্চা মানুষের মনকে সবল করে তোলে। সবল মন মানুষকে যেকোনো কাজে শক্তির সঞ্চার যেমন করে তেমনে সর্বদাই সৎ কর্মে লিপ্ত রাখে। আর এর অভাবেই আজ সমাজে ধর্ষনের মতো অরাজকতা।
ধর্ষন দূরীকরণের পন্থা
ধর্ষন আজ সমগ্র বাংলাদেশকে গ্রাস করছে। এর বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ধিরে ধিরে সফলতার মুখ দেখলেও তা মূলত কীটনাশকের মতো কাজ করছে। অর্থাৎ কীটনাশক যেমন পোকামাকড় মেরে ফেলে তেমনি পরিবেশের ক্ষতিও সাধন করে।
ধর্ষনের মতো ভয়াবহ ব্যাধিকে নির্মূল করতে আমাদেরকে ১৫ থেকে ২০ বছর পূর্বে ফিরে যেতে হবে। তখনকার পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা পুনরায় চালু করে এর সাথে প্রযুক্তি ও অধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে। সেই সাথে আমাদের সবাইকে সুশিক্ষিত ও মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
Leave a Reply